বিশেষ প্রতিনিধি সাতক্ষীরা।। ঘূর্ণিঝড় আম্পান ধেয়ে আসছে সাতক্ষীরাসহ দেশের উপকূলের দিকে। এর প্রভাবে সাতক্ষীরার উপকূলে ঝড়োবাতাস ও বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আর আগে থেকে সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকা শ্যামনগরের আকাশ গুমোট হয়ে ছিল। মঙ্গলবার বেলা একটার দিকে ঝড়ো বৃষ্টি শুরু হয়ে ১৫-২০ মিনিট স্থায়ী হয়ে এখন আকাশ আবার গুমোট হয়ে আছে। উত্তাল হয়ে উঠেছে সুন্দরবন-সংলগ্ন নদীগুলো।
শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, মুন্সিগঞ্জ, বুড়িগোয়ালিনী এলাকার মানুষ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুজর গিফারী বলেন, আজ দুপুর একটার দিকে ঝড়ো বৃষ্টি শুরু হয়ে ১৫-২০ মিনিট স্থায়ী হয়। এখন মাঝে মধ্যে টিপ টিপ করে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে বাতাস হচ্ছে। নদী উত্তাল; পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃষ্টির কারণে গাবুরা থেকে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে একটু সমস্যা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে রমজাননগর ইউনিয়নের দ্বীপ অঞ্চল গোলাখালি এলাকা থেকে ৪০০ জনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে। সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা এলাকা হলো গাবুরা ইউনিয়ন। সেখানকার ৩০ হাজারের মধ্যে দশ হাজার মানুষকে নদী পার করে শ্যামনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেখান থেকে দশ হাজার মানুষকে আনা হলে বাকি ২০ হাজার মানুষের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা সম্ভব।
ইতোমধ্যে ৫০০ জনকে শ্যামনগর আনা হচ্ছে এবং দুই হাজার ৫০০ মানুষকে মাইকিং করে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে। পদ্মপুকুর ইউনিয়নের এক হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে। এসব এলাকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে ৫০টি বাস ও ১০০টি ট্রলার প্রস্তুত রাখা আছে। আজ সন্ধ্যার মধ্যে সকল মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে আনার কথা।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। এর কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২২৫ থেকে ২৪৫ কিলোমিটার। সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানতে পারে বুধবার ভোর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকার মৃদু প্রভাব শুরু হয়েছে। শহর এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে হালকা বাতাস শুরু হয়েছে।
এক মিলিটিমিটারের কম বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষয়-ক্ষতি কমাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকায় লাল পতাকা উঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনসহ প্রতিটি উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে কন্টোল রুম খোলা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে আগতদের জন্য স্যানিটাইজার ও মাস্কের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জ্বর, সর্দি, কাশি থাকলে তাদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা করা হবে। একইসঙ্গে প্রত্যেক ইউনিয়নে মেডিকেল টিম প্রস্তুুত, পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও খাওয়ার পানি মজুদ, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ শুরু করে দিয়েছে।